বর্তমান বাংলাদেশ এ পাসপোর্ট অনলাইনে আাবেদন করা যায়। যাকে ইলেকট্রনিকস পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) বা MRP পাসপোর্ট বলা হয়। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পক্ষ থেকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম ই পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় সকল জেলায় ই পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে, অর্থাৎ আপনি ঘরে বসে আপনার পাসপোর্ট করতে পারবেন। এই পোস্টে কিভাবে ই পাসপোর্ট করতে হয়? পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আপনার পাসপোর্ট করার জন্য কোনো দালালের দরকার নেই। আপনি নিজেই ফোন বা কম্পিউটার থেকে অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করতে পারবেন। পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরন করার নিয়ম এবং কিভাবে ফি জমা দিবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোস্টে ।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
- ই-পাসপোর্ট অনলাইন আবেদনের Application Summery
- জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্ট কার্ডের ফটো কপি
- পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর ফটোকপি (যদি থাকে)
- ঠিকানার প্রমাণপত্র বা ইউটিলিটি বিলের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- পেশাগত সনদের ফটোকপি (পেশাজীবির ক্ষেত্রে)
- চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- অনাপত্তিপত্র-এনওসি (সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে)
- পেনশন দলিল (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে)
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি’র ফটোকপি
- বাবা-মায়ের ছবি
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২২
ই-পাসপোর্টের আবেদনের প্রথম ধাপে আপনার বর্তমান জেলা ও পুলিশ থানার নাম সিলেক্ট করে ক্লিক করতে হবে। এর পরের ধাপে ইমেইল ভেরিফিকেশন করতে হবে এবং তারপর পাসপোর্ট আবেদন ফরমে ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করতে হবে এবং সবশেষে পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা সংখ্যা এবং মেয়াদ এবং ডেলিভারির সময় অনুযায়ী ফ্রি প্রদান করে পাসপোর্ট করতে পারবেন বিস্তারিত নিয়ম নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন ফরম পূরণের নিয়ম
ধাপ ১: প্রথমে ভিজিট করুন বাংলাদেশ পাসপোর্ট ওয়েবসাইট www.epassport.gov.bd । ওয়েবসাইট ওপেন হওয়ার পর Apply Online মেন্যুতে ক্লিক করুন, আপনি নিচের মত একটি পেইজ দেখতে পাবেন। এরপর আপনার জেলা ও পুলিশ থানার সিলেক্ট করে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ২: এখন ই পাসপোর্ট ওয়েবসাইট থেকে আপনার একাউন্ট তৈরি করে ইমেইল ভেরিফিকেশন করতে হবে।আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস লিখে নিচের captcha পূরন করে Continue বাটনে ক্লিক করতে হবে।
তারপর একাউন্ট তৈরি করতে হবে, epassport ওয়েবসাইট এ একাউন্ট তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনার ইমেইল এবং তারপর পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে এবং আপনার নাম জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী দিতে হবে এবং ফোন নম্বর দেয়ার পর epassport ওয়েবসাইট একাউন্ট তৈরি করুন।
এরপর আপনার ইমেইলে একটি ভেরিফিকেশন লিংক পাঠানো হবে, সেই ভেরিফিকেশন লিংকে ক্লিক করে আপনার ইমেইল ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে।
আপনি যে ইমেইল এড্রেস এবং পাসওয়ার্ড সেট করেছেন তা মনে রাখবেন। পাসওয়ার্ড জানা না থাকলে পরবর্তীতে Login করতে পারবেন না।
ধাপ ৩: পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণের এই ধাপে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে। ইমেইল ভেরিফাই করার পর ওয়েবসাইটে আবার লগইন করতে হবে। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী আপনার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লিখতে হবে। তারপর Save and Continue বাটনে ক্লিক করতে হবে।
বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয় তাহলে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করা যাবে। বয়স ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে হলে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড দিয়ে ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করা যাবে।
তবে বয়স যদি ২০ বছর এর বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড দিয়ে আবেদন করতে হবে।
তারপর আপনার পূর্বে যদি কোন পাসপোর্ট/ হাতে লেখা পাসপোর্ট থাকে তাহলে Yes আর না থাকলে No, I don’t have any previous/ handwritten passport এ ক্লিক করতে হবে।
এরপর আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সঠিকভাবে লিখুন। যদি আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা এক হয়, তাহলে নিচ থাকা বক্সে টিক দিতে হবে।
তারপর আপনার পিতা এবং মাতার নাম তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী লিখতে হবে। স্বামী অথবা স্ত্রী এর নাম তার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী লিখুন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
এরপর জরুরি প্রয়োজনে পাসপোর্ট অফিস থেকে যোগাযোগ করতে আপনার বাবা, ভাই বা পরিবারের অন্য সদস্যের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর লিখুন।
তারপর পাসপোর্টের ধরন, কত বছর মেয়েদের পাসপোর্ট অর্থাৎ ৫ বা ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট, কত পাতার পাসপোর্ট এবং কি ধরনের ডেলিভারী নিবেন তা সিলেক্ট করতে হবে, অর্থাৎ সাধারণ বা জরুরী ডেলিভারী নির্বাচন করতে হবে।
এখন পাসপোর্ট আবেদন এর সব তথ্য আবার যাচাই করে আবেদন জমা দেয়ার জন্য Submit বাটনে চাপ দিন। এভাবেই আপনি আপনার পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করে ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করতে পারবেন।
ই পাসপোর্ট ফি কত ২০২২
48 পৃষ্ঠা এবং 5 বছরের মেয়াদী পাসপোর্ট
- 21 দিনের মধ্যে নিয়মিত ডেলিভারি: 4,025 টাকা
- 10 দিনের মধ্যে এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 6,325 টাকা
- 2 দিনের মধ্যে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 8,625 টাকা
48 পৃষ্ঠা এবং 10 বছরের মেয়াদী পাসপোর্ট
- 21 দিনের মধ্যে নিয়মিত ডেলিভারি: 5,750 টাকা
- 10 দিনের মধ্যে এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 8,050 টাকা
- 2 দিনের মধ্যে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 10,350 টাকা
64 পৃষ্ঠা এবং 5 বছরের মেয়াদী পাসপোর্ট
- 21 দিনের মধ্যে নিয়মিত ডেলিভারি: 6,325 টাকা
- 10 দিনের মধ্যে এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 8,625 টাকা
- 2 দিনের মধ্যে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 12,075 টাকা
64 পৃষ্ঠা এবং 10 বছরের মেয়াদী পাসপোর্ট
- 21 দিনের মধ্যে নিয়মিত ডেলিভারি: 8,050 টাকা
- 10 দিনের মধ্যে এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 10,350 টাকা
- 2 দিনের মধ্যে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 13,800 টাকা
ই পাসপোর্ট ফি প্রদান করার নিয়ম
অনলাইনে ই পাসপোর্ট ফি প্রদান করার জন্য AChallan ওয়েবসাইট অথবা আ্যপ এর মাধ্যমে ই পাসপোর্ট ফি প্রদান করা যায়। ই-পাসপোর্ট ফি অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারেন AChallan এর মাধ্যমে যে কোনো ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যেমন বিকাশ, নগদ ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের যে কোন শাখায় ই-পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারবেন যেমন ওয়ান ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ইত্যাদি।
ই পাসপোর্ট করা হয়ে গেলে আপনার পাসপোর্ট চেক করতে হবে কিভাবে করবেন দেখুন এখানেঃ ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম